জেলা প্রতিনিধি, লক্ষ্মীপুর: কমলনগর উপজেলার মাতাব্বর নগর দারুচ্ছুন্নাত আলিম মাদ্রাসায় কর্মচারী নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
পদগুলোতে কর্মচারী নিয়োগে নিয়ম রক্ষার পরীক্ষায় দুটি পদে মাদ্রাসাটির গভর্নিং বডির সভাপতির ছেলে ও এক আত্মীয় এবং অপর দুটি পদে অধ্যক্ষের পছন্দের দুই প্রার্থীকে চূড়ান্ত করা হয়েছে।
সভাপতি ও অধ্যক্ষ যোগসাজশ করে অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্নের অপচেষ্টা করছেন। নিয়োগ প্রক্রিয়াটি বাতিলের দাবিতে জেলা প্রশাসক ও ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন গভর্নিং বডির চার সদস্য। তাঁরা হলেন- হাবিব উল্যাহ, মনির আহমদ, আবদুর রহিম ও আকরাম হোসেন সাহেদ।
অভিযোগপত্র থেকে জানা গেছে, মাতাব্বর নগর দারুচ্ছুন্নাত আলিম মাদ্রাসার অফিস সরহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর, অফিস সহকারী কাম হিসাব সহকারী, নিরাপত্তাকর্মী ও আয়া নিয়োগে সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন কর্তৃপক্ষ। পদগুলোতে আবেদন করেন ৪৮ প্রার্থী। গত ৮ অক্টোবর নিয়োগ পরীক্ষার আয়োজন করা হয়। কিন্তু পরীক্ষার আগেই মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সভাপতি আব্দুর রবের ছেলেসহ বিভিন্ন পদে প্রার্থী চূড়ান্ত হওয়ার অভিযোগ প্রকাশ্যে আসে।
এ নিয়ে ফেসবুকে শুরু হয় সমালোচনা। বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেন চাকরিপ্রার্থীরা। এসবের তোয়াক্কা না করে ৮ অক্টোবর অনুষ্ঠিত নিয়োগ পরীক্ষায় অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদের ১৬ প্রার্থীর মধ্যে সভাপতির ছেলে মো. সোলাইমান, অফিস সহকারী কাম হিসাব সহকারী পদের ১৫ প্রার্থীর মধ্যে অধ্যক্ষের পছন্দের প্রার্থী ছাত্রদল নেতা আল-আমিন, নিরাপত্তাকর্মী পদে আট প্রার্থীর মধ্যে সভাপতির আত্মীয় (সম্পর্কে নাতি) ও আয়া পদের ৯ প্রার্থীর মধ্যে অধ্যক্ষের বাসার কাজের মেয়ে শারমিন আক্তারকে চূড়ান্ত করা হয়েছে। অথচ তাঁদের চেয়ে যোগ্য প্রার্থীদের বাদ দেওয়া হয়েছে।
নীতিমালা অনুযায়ী নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্নের জন্য গভর্নিং বডির সভায় ‘নিয়োগ কমিটি’ গঠনের প্রস্তাব ও অনুমোদন দেওয়া হয়। কিন্তু অধ্যক্ষ গভর্নিং বডির অভিযোগকারী চার সদস্যকে না জানিয়েই ‘নিয়োগ কমিটি’ গঠন করেছেন। পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার আগে নিয়োগ কমিটি কিভাবে গঠন হয়েছে-এ বিষয়ে তাঁরা অধ্যক্ষের কাছে জানতে চান। কিন্তু সদুত্তর দিতে পারেননি অধ্যক্ষ মাওলানা আলী হোছাইন।
গভর্নিং বডির সদস্য হাবিব উল্যাহ বলেন, অধ্যক্ষের কারণে মাদ্রাসাটি অনিয়মের সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে। প্রায় ৮০০ শিক্ষার্থীর এ প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয় সম্পর্কে অধ্যক্ষ ছাড়া অন্য কেউ জানতে পারেন না। তিনি ইচ্ছেমতো প্রতিষ্ঠানের অর্থ খরচ করছেন। প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব তলব করলেই অভিযোগের প্রমাণ মিলবে।
তিনি বলেন, ‘সাত বছর ধরে গভর্নিং বডির সদস্য পদে রয়েছি। বিভিন্ন সভায় আমি অধ্যক্ষের এসব দুর্নীতির বিষয়ে কথা বললেও প্রতিকার মেলে না।’
অধ্যক্ষ মাওলানা আলী হোছাইনের ভাষ্য- স্বচ্ছতার মাধ্যমেই নিয়োগ কার্যক্রম শেষ করছেন। যথাযথ নিয়মে প্রতিষ্ঠানের টাকা ব্যয় করছেন; কোনো অনিয়মের সঙ্গে জড়িত না তিনি।
গভর্নিং বডির সভাপতি আব্দুর রব বলেন, তাঁর ছেলে ও নাতি মেধার ভিত্তিতে পরীক্ষায় প্রথম হয়ে নিয়োগের জন্য চূড়ান্ত হয়েছেন। এখানে তাঁর কোনো হস্তক্ষেপ ছিল না।
ইউএনও মো. কামরুজ্জামান জানান, অভিযোগটি তদন্তের জন্য শিগগিরই একটি কমিটি গঠন করা হবে। তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।